false
গত সেপ্টেম্বরে পুরো অস্ট্রেলিয়াতেই রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন রবিন খুদা। দেশটির শীর্ষ সব গণমাধ্যমের খবর হলো, প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা এক লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকার বেশি দামে রবিন খুদার প্রতিষ্ঠান ‘এয়ারট্রাংক’ অধিগ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ব্ল্যাকস্টোন ইনকরপোরেশন ও কানাডা পেনশন প্ল্যান ইনভেস্টমেন্ট বোর্ডের (সিপিপি ইনভেস্টমেন্ট) নেতৃত্বে একটি কনসোর্টিয়াম। আর সম্পদ বৃদ্ধি পেয়ে অস্ট্রেলিয়ার ধনকুবেরদের তালিকায় ওপরের দিকে চলে এসেছে রবিন খুদার নাম। রবিন খুদাদের আদি বাড়ি সিরাজগঞ্জের ছাতিয়ানতলী গ্রামে। তার বাবা এস এম ওয়াজেদ আলী উচ্চমাধ্যমিক পড়তে ঢাকায় এসেছিলেন। এরপর পড়াশোনা শেষে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকাতেই রবিনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। পড়াশোনা করেছেন শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় ও হারম্যান মেইনার কলেজে। ১৯৯৭ সালে এইচএসসি পাসের পর অস্ট্রেলিয়ার চলে আসেন রবিন খুদা। স্নাতকে ভর্তি হন সিডনি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিষয় হিসাববিজ্ঞান। একমাত্র ছেলে সিডনিতে থিতু হলে তার মা-বাবাও পরের বছর অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসেন। এরপর এখানেই চাকরি শুরু করেন এস এম ওয়াজেদ আলী। ২০০২ সালে স্নাতক শেষ করে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ করেন রবিন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নানা কাজই করতেন। এবার হিসাবরক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন একটি প্রতিষ্ঠানে। কাজের প্রতি রবিনের একাগ্রতা আর দক্ষতা তাকে দ্রুত এগিয়ে নিতে থাকল। তিনি নিজেও সিপিএর (সার্টিফাইড প্রাকটিসিং অ্যাকাউন্ট্যান্ট) মতো বিভিন্ন পেশাগত কোর্স করে সমৃদ্ধ হতে থাকলেন। এই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালে যোগ দেন জাপানি প্রতিষ্ঠান ফুজিৎসুতে। পদ ছিল মহাব্যবস্থাপক। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড অঞ্চলের টেলিকম ও ক্লাউড কম্পিউটিং বিভাগের কাজে দুই বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন। এরপর প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব নেন অস্ট্রেলিয়ান টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি পাইপ নেটওয়ার্কে। কোম্পানিটি অস্ট্রেলিয়া ও গুয়াম দ্বীপের মধ্যে একটি সাবমেরিন ফাইবার কেব্ল নির্মাণের কাজ করছিল তখন। টেলিকমিউনিকেশন ব্যবসা নিয়ে বিস্তর অভিজ্ঞতা হলো। এরপর ডেটা সেন্টার কোম্পানি নেক্সটডিসির নির্বাহী পরিচালক হলেন রবিন। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেই ছিল তার কাজ। রবিনের দক্ষতা তাদের নজর কাড়ে। বর্তমানে প্রায় ১০ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের এই প্রতিষ্ঠান বড় করার পেছনে রবিনের বড় ভূমিকা আছে। ২০১৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে টেলিকম পেমেন্ট কোম্পানি মিন্ট ওয়্যারলেসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব নেন। এয়ারট্রাংকে ধারণাটি আসার গল্প জানান রবিন খুদা। তিনি বলেন, ‘২০১০ কি ২০১১ সাল থেকেই দেখছিলাম ক্লাউডসেবা জনপ্রিয় হচ্ছে। অ্যামাজন, গুগল বা মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিগুলো এগিয়ে তখন, তবু ডেটা সেন্টার–শিল্পে সুযোগ দেখতে পেলাম। তখন থেকেই আমি কম খরচে, কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ক্লাউড স্টোরেজ নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু করি। এভাবেই এয়ারট্রাংকের যাত্রা।’ ২০১৫ সালে এয়ারট্রাংক যাত্রা শুরু করে। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৪০০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি ডেটা সেন্টার নির্মাণের কাজ পান তারা। কাজটা পেয়ে মহাসংকটে পড়লেন রবিন খুদা। এই কাজ করার মতো পুঁজি এয়ারট্রাংকের নেই। ঋণ নেওয়ার জন্য ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হলেন। এয়ারট্রাংক নতুন প্রতিষ্ঠান, তেমন সুনামও নেই— তাই কেউ বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাল না। এরপরও হাল ছাড়লেন না রবিন। নিজের জমানো টাকাসহ প্রায় সব সঞ্চয় তুলে শুরু করলেন কাজ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করলেন। এক সময় সফল হলেন। তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে ১৭ মেগাওয়াট ডেটা সেন্টার নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ৪০০ মিলিয়ন ডলার আমাদের কাছে ছিল না। সৌভাগ্যবশত ২০১৭ সালের শুরুতে আমরা তহবিল সংগ্রহ করতে সক্ষম হই।’ তথ্য ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তিপাড়ায় এয়ারট্রাংক এখন সুপরিচিত নাম। তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সাড়ে চারশোর বেশি কর্মী। এটি দেশটির প্রথম এবং বৃহৎ হাইপারস্কেল ডেটা সেন্টার। বর্তমানে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ও জাপানে এয়ারট্রাংকের ক্লাউডসেবা চালু আছে। অস্ট্রেলিয়া, হংকং, জাপান, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে প্রতিষ্ঠানটির ১১টি ডেটা সেন্টার রয়েছে। আরো ৪০টি কেন্দ্র চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। একসময় যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরতেন রবিন খুদা, তারাই এখন ঋণের প্রস্তাব নিয়ে এয়ারট্রাংকের কাছে আসে। গত বছর ঋণ দেওয়া জন্য যেমন ৪০টির বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব দিয়েছিল। রবিনের প্রতিষ্ঠানটি প্রয়োজনীয় ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ গ্রহণ করেছে প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠানের কারো কারো কাছ থেকে। বছর শেষে অধিগ্রহণের খবরে আরো চমক দেয় এয়ারট্রাংক। ব্ল্যাকস্টোন ও সিপিপি ইনভেস্টমেন্টের নেতৃত্বে একটি কনসোর্টিয়াম এয়ারট্রাংক অধিগ্রহণের সময় প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক মূল্যমান ছিল ১০০ বিলিয়ন ডলার। এয়ারট্রাংক অধিগ্রহণ হয়ে গেলেও রবিন খুদা আগের মতোই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবেই রয়ে গেছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে তার মালিকানাও আছে। সেই হিসেবে রবিন এখন অস্ট্রেলিয়ার ১০৯তম ধনী। রবিন খুদাকে গত বছর ‘বিজনেস পারসন অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ফাইন্যান্সিয়াল রিভিউ (এএফআর) পত্রিকা। ২০২০ সালে ‘খুদা ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন রবিন। এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নতি ও কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশনটি প্রযুক্তি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কাজ করে। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধেও সহায়তা করে। সম্প্রতি জানা গেছে, এই ফাউন্ডেশন থেকে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা (১০০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার) অনুদান দিয়েছেন রবিন। বিশ্ববিদ্যালয়টির স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) বিষয়ের নারী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও অনুদানে অর্থ ব্যয় করা হবে। যদিও প্রকল্পটি নিয়ে তিনি দুই বছর ধরে কাজ করছেন; যা এত দিন অনেকে জানতেনই না। এভাবে নিভৃতেই কাজ করে যেতে চান রবিন খুদা। বললেন, ‘অনেক কিছু ত্যাগ করে মা-বাবা আমাকে পড়াশোনা আর উন্নত জীবনের আশায় অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়েছিলেন। এরপর এখানেই থেকে গেলাম।’ আমারবাঙলা/এমআরইউ

বাংলাদেশের রবিন অস্ট্রেলিয়ার ধনকুবের
Tags
# Amarbangla Feed
# IFTTT
Share This
.png)
About News Desk
IFTTT
Tags:
Amarbangla Feed,
IFTTT
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
লেখক-এর বিবরণ
আসসালামু আলাইকুম।
আমরা আপনাদের মাঝে নিয়ে এসেছি সকল চাকরি, সরকারি নোটিশ, লেখাপড়ার খবর, প্রশ্নপত্র এবং অন্যান্য খবর সবার আগে পেতে আমাদের আমাদের সাথে থাকুন।ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment