false
হারুন মোল্যার বয়স এখন ৬৮ বছর। তিনি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ৫২ বছর ধরে খেজুরগাছ কাটেন। খেজুরগাছ থেকে রস আহরণ এবং সেই রস জ্বাল দিয়ে গুড় ও পাটালি তৈরি করে বিক্রি করেন। হারুন মোল্যা মূলত কৃষক। শীতকালে খেজুরগাছ কাটেন। নিজের ১২টি খেজুরগাছ আছে। অন্যের খেজুরগাছ ভাগে নিয়ে এবং মৌসুমে খেজুরগাছ ইজারা নিয়ে এই খেজুরগাছ কেটে আয় করেন। তার কাছে পাওয়া যায় খাঁটি গুড় ও পাটালি। এ বছর তিনি ১১৩টি খেজুরগাছ কাটছেন। নিজের গাছের বাইরে ২১টি গাছ মালিকের কাছে থেকে ভাগে নিয়েছেন। এক কাটের রস তিনি পান, গাছের মালিক পান পরের কাটের রস। এ ছাড়া তিনি এ মৌসুমের জন্য ১৬ হাজার টাকায় ৮০টি গাছ ইজারা নিয়েছেন। ১৫ অগ্রহায়ণ থেকে শুরু করে ১৫ চৈত্র পর্যন্ত তিনি খেজুরগাছ কাটেন। দিনে ১০-২০ ভাঁড় (প্রায় পাঁচ লিটারের ভাঁড়) রস পাওয়া যায়। কাঁচা রস তিনি প্রতি ভাঁড় ২৫০ টাকায় বিক্রি করেন। গত শনিবার দুপুরে বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা গ্রামের মাঠে খেজুরগাছ কাটছিলেন হারুন মোল্যা। পুরো প্রক্রিয়াটি চমৎকার ও গোছানো। একইসঙ্গে দীর্ঘদিনের চর্চার ফসল। সরেজমিন দেখা যায়, হারুন মোল্যার শরীরে প্যাঁচানো মোটা দড়ি। কোমরের ঠিক পেছনের দিকে ঝুলছে বাঁশের তৈরি লম্বা ঝুড়ি, ভেতরে ধারালো গাছি দা। পাশে ঝুলছে মাটির ভাঁড়। তরতর করে বেয়ে খেজুরগাছে উঠলেন এ গাছি। খেজুরগাছের মাথায় উঠে শরীরে প্যাঁচানো মোটা দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে শরীরটা বাঁধলেন। পা দুটি গাছের আগের কাটা খাদে শক্ত করে চেপে ধরলেন। এরপর ঝুড়ি থেকে দা বের করে দড়িতে ভর দিয়ে কিছুটা হেলে গাছের উপরিভাগের তোলা অংশে দুটি চোখ কিছুটা কাটলেন। চোখ দুটির মাঝখানে নল বা নলির নিচে দড়ি দিয়ে বেঁধে মাটির ভাঁড় ঝুলিয়ে দিলেন। গাছের সঙ্গে বাঁধা দড়ি খুলে তরতর গাছ থেকে নেমে পড়লেন। তিনি বলেন, দুপুর থেকে খেজুরগাছ কাটা শুরু হয়। গাছ কাটতে কাটতে বিকাল হয়ে যায়। পরের দিন ভোরবেলায় খেজুরগাছ থেকে রসভর্তি ভাঁড় নামিয়ে আনা হয়। চার দিন বিরতি দিয়ে পঞ্চম দিনে আবার ওই গাছ কাটা হয়। একবার গাছ কাটলে তিন দিন রস পাওয়া যায়। প্রথম দিনের রসকে বলে ‘জিড়ানকাট’। এ রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় ভালো পাটালি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে রসের পরিমাণ কমতে থাকে। দ্বিতীয় দিনের রসকে ‘দোকাট’ ও তৃতীয় দিনের রসকে ‘তেকাট’ বলে। এই রস দিয়ে ঝোলা গুড় বা চিটাগুড় তৈরি হয়। হারুন মোল্যা বলেন, মাটির তৈরি পাত্র ‘নানদা’ অথবা টিনের তৈরি ‘তাফালে’ রস রেখে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। তবে পাটালি তৈরি করতে রস তিন ঘণ্টা জ্বাল দিতে হয়। গুড় গাঢ় হলে চুলা থেকে নামিয়ে নানদা বা তাফালের এক পাশে কিছুটা গুড় নিয়ে ছোট করে কাটা খেজুরপাতার ডাঁটা দিয়ে গুড় ঘষে সাদা করা হয়। একে ‘বীজ মারা’ বলে। এরপর বীজ গুড় অবশিষ্ট গুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। শেষে পলিথিন অথবা কলার পাতার ওপর গুড় ঢেলে শুকিয়ে পাটালি তৈরি করা হয়। যশোরের বিভিন্ন এলাকায় যত দূর চোখ যায়, শুধু খেজুরগাছ আর খেজুরগাছ। দিগন্তজোড়া মাঠে খেজুরগাছের দীর্ঘ সারি। সড়কের পাশে, খেতের আলে, বাড়ির আঙিনায়, উঁচু জমিতে আছে খেজুরগাছের সারি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার আট উপজেলায় মোট ২৩ লাখ ৯২ হাজার ৩৮৩টি খেজুরগাছ আছে। এর মধ্যে রস হয়, এমন গাছ তিন লাখ ১২ হাজার ৬০৬টি। সবচেয়ে বেশি খেজুরগাছ আছে যশোর সদর, মনিরামপুর, অভয়নগর, চৌগাছা ও বাঘারপাড়া উপজেলায়। একটি গাছ থেকে মৌসুমে গড়ে ১৫০ লিটার রস পাওয়া যায়। ওই রস জ্বাল দিয়ে প্রায় ১৫ কেজি গুড় হয়। জেলায় বছরে গড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন গুড়-পাটালি হয়। বর্তমানে জেলায় ছয় হাজার ৩১৪ জন গাছি আছেন। প্রতি কেজি খাঁটি গুড় ও পাটালি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে এসব গুড়-পাটালি দেশের অন্যান্য জেলাতেও যাচ্ছে। হারুন মোল্যা জানান, এক সপ্তাহ গাছ কাটলে যে রস পাওয়া যায়, তা দিয়ে এক মণের বেশি তরল গুড় অথবা শক্ত পাটালি তৈরি হয়। তরল গুড় প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায় বিক্রি করেন। এখন পাটালি ৪০০ টাকা করে কেজি বিক্রি করছেন। ক্রেতারা বাড়ি থেকেই রস, গুড় ও পাটালি কিনে নিয়ে যান। তবে তার আফসোস, ঝুঁকি নিয়ে গাছ কাটতে হয়। চুলা জ্বালিয়ে গুড়-পাটালি তৈরি করে বিক্রি করতে হয়। এত কষ্ট করার পরও ভালো দাম পাওয়া যায় না। আগের মতো গাছ নেই, গাছিও কমছে। আমারবাঙলা/এমআরইউ

দীর্ঘ ৫২ বছর খেজুরগাছ কাটেন হারুন মোল্যা
Tags
# Amarbangla Feed
# IFTTT
Share This
.png)
About News Desk
IFTTT
Tags:
Amarbangla Feed,
IFTTT
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
লেখক-এর বিবরণ
আসসালামু আলাইকুম।
আমরা আপনাদের মাঝে নিয়ে এসেছি সকল চাকরি, সরকারি নোটিশ, লেখাপড়ার খবর, প্রশ্নপত্র এবং অন্যান্য খবর সবার আগে পেতে আমাদের আমাদের সাথে থাকুন।ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment