false
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ৫ আগস্ট ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই দফায় সংলাপ শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এখন সনদের খসড়া চূড়ান্ত করার পর্বে রয়েছে। বাকি আছে শুধু দলগুলোর মতামত ও স্বাক্ষর সংগ্রহের কাজ। তবে সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকায় সময়মতো এই প্রক্রিয়া শেষ করা যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গত ২৮ জুলাই ‘জুলাই জাতীয় সনদের’ প্রাথমিক খসড়া প্রকাশের পর থেকেই এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। খসড়ায় দুই বছরের মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাব থাকলেও এতে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল। তাদের মতে, আগামী জাতীয় সংসদে সনদটিকে আইনি ভিত্তি দেওয়াই যৌক্তিক হবে। বিএনপির সঙ্গে একমত হয়েছে তাদের সমমনা দলগুলোও। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল বলছে, নির্বাচনের আগেই সনদের আইনি ভিত্তি নির্ধারণ এবং বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করা জরুরি। এসব দলের আপত্তি, খসড়ায় বাস্তবায়ন সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা না থাকায় তারা সনদে স্বাক্ষর না করার হুমকি দিয়েছে। এ ছাড়া ৩১ জুলাইয়ের শেষ বৈঠকে সিপিবি, বাসদসহ চারটি বামপন্থী দল সংবিধানের মূলনীতি নিয়ে আপত্তি তোলে। কমিশনের পক্ষ থেকে বিদ্যমান চারটি মূলনীতি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব এলে তারা বৈঠক বর্জন করে। দলগুলো জানিয়েছে, কমিশনের প্রস্তাব পরিবর্তন না হলে তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না। জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি গড়ায় রাজপথেও। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ৩০ ঘণ্টার বেশি রাজধানীর ব্যস্ত শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে অভ্যুত্থানে হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম ‘জুলাই যোদ্ধা সংসদ’। শুক্রবার(১ আগস্ট) সন্ধ্যায় অবশ্য ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধা’ দাবিদার আরেকটি পক্ষ সেই অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা করলে পুলিশ দুই পক্ষকে লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়। এমন আবহে জুলাই সনদ নিয়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন সূত্র বলছে, আনুষ্ঠানিক সংলাপ শেষ হলেও সনদের চূড়ান্ত খসড়া করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক আলাপে দেওয়া দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে খসড়া চূড়ান্ত করতে আগামীকাল রোববার আলোচনায় বসবে কমিশন। তবে এই আলোচনা শেষ হতে কয়েক দিন লাগতে পারে। আলোচনার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। দলগুলোর মতামত নেওয়ার পর তাদের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ প্রণয়নের কাজ শেষ হবে। এই অবস্থায় ৫ আগস্টের মধ্যে যে সনদ প্রণয়নের কাজ শেষ হচ্ছে না, তা এখন অনেকটা নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন কমিশন-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে এই সপ্তাহে আবারও আমরা দলগুলোর সঙ্গে বসব। বাস্তবায়ন নিয়ে যে জটিলতা চলছে, তাতে এক দিনের আলোচনায় সুরাহা হবে না, এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি।’ ৫ আগস্ট জুলাই সনদে দলগুলোর স্বাক্ষরের সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজও। সনদ প্রণয়নে কমিশনের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেসব বিষয়ে একমত হওয়া গেছে, নোট অব ডিসেন্টের (আপত্তি) সঙ্গে সেগুলো সন্নিবেশিত করে সনদের খসড়ার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শকে বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত করতে হবে।...আমাদের দেখতে হবে বাস্তবায়নে কোনটার ক্ষেত্রে কী অবস্থা। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে, কীভাবে অগ্রসর হবে।’ গত বৃহস্পতিবার রাতে নির্দিষ্ট দিন-তারিখ উল্লেখ না করে আলী রীয়াজ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যে জাতীয় সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ প্রস্তুত করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। তার আগের দিন বুধবার সন্ধ্যায় সংলাপের বিরতিতে প্রধান উপদেষ্টা ও ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস কমিশন সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি সনদ বাস্তবায়নের পথরেখা বের করতে দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় বসার নির্দেশনা দেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। ওই সূত্র বলছে, প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন, বাস্তবায়ন দ্রুত না হলে ঐকমত্য কমিশন তথা সংলাপের বিষয়ে জনগণ প্রশ্ন তুলবে, তাতে সংলাপের সফলতা ম্লান হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা ব্যক্তি ও সংগঠনগুলো বিদ্যমান রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ফ্যাসিবাদের সহায়ক অভিহিত করে এর পরিবর্তনে সনদ প্রণয়নের দাবি ওঠান। এই লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতি ও অঙ্গীকার আদায় করতে গত ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত প্রথম পর্বের সংলাপ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ৪৫ দিনের সংলাপে কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়। গত ৩ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বের ২৩ দিনের সংলাপে ১৯টি বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দেয় কমিশন। এর মধ্যে আটটি বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য হয়। বাকি ১১টিতে কারও না কারও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা আপত্তি রয়েছে। জুলাই সনদ নিয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘খসড়ার যেসব সুপারিশ সবাই গ্রহণ করেছে, সেগুলো একত্র করে জুলাই সনদ প্রণীত হবে। আশা করি, সবাই ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনপ্রক্রিয়ায় একমত হবে।’ জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘এটাকে (জুলাই সনদ) আইনি ভিত্তি দিতে হবে। আইনি ভিত্তি না দিলে এই আলোচনার কোনো অর্থ নাই। আমরা আশাবাদী, আগামী নির্বাচনের আগেই আইনি ভিত্তির মাধ্যমে এর বাস্তবায়নের উদ্যোগ আসবে।’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমের ওপর মানুষের নজর রয়েছে উল্লেখ করে তরুণদের দল এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘এগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমরা যদি বাস্তবায়ন করতে না পারি, আইনি ভিত্তি প্রদান করতে না পারি, তাহলে মানুষের প্রত্যাশার জায়গা অপূর্ণ থেকে যাবে। আমরা এই সনদকে ইতিহাসের নিছক দলিল বা কিছু কথামালার সুপারিশ হিসেবে দেখতে চাই না। এর বাস্তবায়ন যাতে আটকে না যায়।’ আমারবাঙলা/এফএইচ

চূড়ান্ত পর্যায়ে জুলাই জাতীয় সনদ, ঐকমত্যের পথে কঠিন বাঁধা
Tags
# Amarbangla Feed
# IFTTT
Share This
.png)
About News Desk
IFTTT
Tags:
Amarbangla Feed,
IFTTT
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
লেখক-এর বিবরণ
আসসালামু আলাইকুম।
আমরা আপনাদের মাঝে নিয়ে এসেছি সকল চাকরি, সরকারি নোটিশ, লেখাপড়ার খবর, প্রশ্নপত্র এবং অন্যান্য খবর সবার আগে পেতে আমাদের আমাদের সাথে থাকুন।ধন্যবাদ।
No comments:
Post a Comment