false
নব্বই দশকের আবেদনময়ী ডেমি মুর ক্যারিয়ারের শেষের দিকে এসে প্রবলভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন। বলা চলে, অনেকের যখন শেষের সময়; তখনই নতুন করে ফিরলেন এ অভিনেত্রী। টাইম সাময়িকীর ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকায় নাম উঠল তার। সর্বশেষ পিপল সাময়িকীর বিচারে তিনিই ২০২৫ সালের বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী নারী! ৬২ বছর বয়সে এসে এত অর্জনের কথা নিজেও কি ভেবেছিলেন এই হলিউড তারকা? ব্রুস উইলিস তখন সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতা। ডেমি মুরই আর পিছিয়ে থাকবেন কেন। ‘স্ট্রিপটিস’ সিনেমার জন্য ১২ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডলার পারিশ্রমিক নিয়ে তিনি হলেন সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী। সময়টা নব্বই দশকের মাঝামাঝি; ব্রুস আর ডেমি তখন স্বামী-স্ত্রী। একই ঘরে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া দুই তারকা থাকেন, ভাবা যায়! এই সাড়ে ১২ মিলিয়ন ডলার ডেমির জন্য সুখ্যাতি আর কুখ্যাতি দুই এনে দেয়। ১৯৯৫ সালে স্ট্রিপটিজ সিনেমার পোস্টারে তার সেই আবেদনময়ী পোজ এতটাই আলোচিত যে এখনো অভিনেত্রীর নাম লিখলে পরের লাইনে আপনাকে অবধারিতভাবে সিনেমার নামটিও লিখতে হয়। কারণ যতই তিনি গোস্ট, ইনডিসেন্ট প্রপোজাল, ডিসক্লোজার করুন, মানুষ তাকে মনে রেখেছে স্ট্রিপটিজ-এর জন্য। এত দিন পরে এসে অবশ্য স্ট্রিপটিজ-এর বিব্রত ডেমি। ‘বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রী হওয়ার সুযোগ অবশ্যই লোভনীয় ছিল। তখন মনে হয়েছিল, এই সুযোগ কেন হাতছাড়া করব? আমার মনে হয়, অন্য যে কেউই এ প্রস্তাব গ্রহণ করত। কিন্তু এখন মনে হয় সিনেমায় কেবল শরীরই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এ জন্য আমি খুবই লজ্জিত,’ গত বছর দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর পডকাস্টে বলেন ডেমি। টালমাটাল শৈশব: ১৯৬২ সালের ১১ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোয় জন্ম ডেমি মুরের। তবে তার জন্মের আগেই বাবা চার্লস ফস্টার হারমন মা ভার্জিনিয়া কিংকে ছেড়ে চলে যান। ডেমির বয়স যখন মোটে তিন মাস, মা আবার বিয়ে করেন। ডেমির সৎবাবা কাজ করতেন সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন বিভাগে। ফলে এক শহর থেকে আরেক শহরে ছুটতে হয়েছে তাদের। ১৯৮০ সালে সেই সৎবাবাও আত্মহত্যা করেন। দাম্পত্য অশান্তি, অর্থনৈতিক টানাপোড়নসহ নানা কারণে ডেমির মায়ের মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না। মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। ২০১৯ সালে নিজের কৈশোর নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য দেন। জানান, ১৫ বছর বয়সে নিজের বাড়িতেই ধর্ষণের শিকার হন তিনি। ধর্ষণকারী দাবি করেন, তিনি এ জন্য ডেমির মাকে ৫০০ ডলার দিয়েছিলেন। ডেমির আত্মজীবনী ‘ইনসাইড আউট’-এ সবিস্তারে সেই ঘটনা লিখেছেন অভিনেত্রী। বইতে তার মায়ের আত্মহত্যা প্রবণতা সম্পর্কেও লিখেছেন ডেমি। তবে কৈশোর পেরিয়ে ধীরে ধীরে নিজের পথ খুঁজে নেন ডেমি। শুরুর শুরু: আশির দশকের গীতিকার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন ডেমি। ফ্রেডি মুরের সঙ্গে সঙ্গে তিনটি গান লেখেন, হাজির হন মিউজিক ভিডিওতেও। ১৯৮১ সালে প্রাপ্তবয়স্কদের সাময়িকী উতে প্রচ্ছদ হন তিনি। এই সাময়িকীর প্রচ্ছদে নগ্ন হয়ে সাড়া ফেলে দেন। পরে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন পোজ দেওয়ার সময় তার বয়স ছিল ১৬, কিন্তু তিনি বয়স লুকিয়ে বলেছিলেন ১৮! ১৯৮১ সালেই ‘চয়েসেজ’ সিনেমায় ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। আশির দশকে আরো সিনেমা করেন, তবে কোনোটিই মনে রাখার মতো নয়। একমাত্র ব্যতিক্রম ‘দ্য সেভেন্থ সাইন’ ও ‘উই আর নো অ্যাঞ্জেলস’। পরেরটিতে তাকে পর্দায় দেখা যায় রবার্ট ডি নিরো ও শন পেনের সঙ্গে। অশান্ত সংসার: ১৯৯১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গায়ক ফ্রেডি মুরকে বিয়ে করেন ডেমি। ফ্রেডির তখন প্রথম স্ত্রী লুসির সঙ্গে সদ্যই বিচ্ছেদ হয়েছে। তবে এই বিয়ে টিকেছিল মোটে দুই বছর। মার্কিন অভিনেতা ও নির্মাতা টিমোথি হাটনের সঙ্গে তখন ডেমির প্রেম চলছে; ধারণা করা হয় এই সম্পর্কই ফ্রেডির সঙ্গে তার বিয়ে ভাঙার কারণ। তবে এই প্রেমও স্থায়ী হয় না, অভিনেতা এমিলিও এস্তেভেজের সঙ্গে বাগদান হয়। ১৯৮৬ সালের ৬ ডিসেম্বর তাদের বিয়ের দিনক্ষণ পাকা হয়। তবে বিয়ের ঠিক আগে বাগদান ভেঙে দিয়ে দুজনই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসেন। ১৯৮৭ সালে অভিনেতা ব্রুস উইলিসের সঙ্গে ঘর বাঁধেন ডেমি। এই সংসারে তাদের তিন সন্তান হয়। ১৩ বছর পর ২০০০ সালের ১৮ অক্টোবর এ সংসারও ভেঙে যায়। এর বছর দুয়েক পর থেকেই ডেমির সঙ্গে অভিনেতা অ্যাস্টন কুচারের প্রেমের গুঞ্জন শুরু হয়। গুঞ্জন সত্যি করে এই তারকা যুগল বিয়ে করেন ২০০৫ সালে। ২০১২ সালে তৃতীয় বিয়েও ভেঙে যায়, এরপর আর বিয়ে করেননি ডেমি। ভ্যানিটি ফেয়ার বিতর্ক: ক্যারিয়ারের শুরুতেই প্রাপ্তবয়স্কদের সাময়িকীতে নগ্ন হয়ে পোজ দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ডেমি মুর। ঠিক এক দশক পর আবার তিনি নগ্ন হয়ে পোজ দেন। ১৯৯১ সালের আগস্টে তাকে প্রচ্ছদ করে ভোগ সাময়িকী তখন বাজারে আসে, সারা দুনিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। তবে এবার পোজটি নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। কারণ, নগ্ন হয়ে ডেমি যখন ফটোশুটে অংশ নেন, তখন তিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। কেউ এটিকে ‘শালীনতার পরিপন্থী’ হিসেবে আখ্যা দেন, কেউ আবার বলেন শক্তির প্রতীক। বিভিন্ন সাময়িকীতে ছবিটি নিয়ে প্রবল বিতর্ক চলতেই থাকে। তবে ডেমি মুর যে এসব থোড়াই কেয়ার করেন, তা বোঝা যায় পরের বছরই। ১৯৯২ সালে নিভারন হয়ে ভ্যানিটি ফেয়ারের প্রচ্ছদে আবার পোজ দেন। এবার তার ছবিতে যুক্ত হয় বডি পেইন্ট শিল্পীর আঁচড়, শৈল্পিক মানের কারণে সেই প্রচ্ছদের প্রশংসা করেন অনেক সমালোচক। ৪৫ বছরের অপেক্ষা শেষে: নব্বইয়ের দশকের আলোচিত-সমালোচিত সেই ডেমি ধীরে ধীরে পাদপ্রদীপের আলো থেকে সরে যেতে থাকেন। চলতি শতকে তিনি নানা ঘরানার সিনেমা করছেন বটে, কোনোটিই সেভাবে উল্লেখযোগ্য নয়। সেই ডেমিই প্রবলভাবে ফেরেন ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’ দিয়ে। গত বছর মুক্তি পাওয়া বডি হরর এই সিনেমায় অভিনয় করে বনে যান সমালোচকদের প্রিয় পাত্রী। এই এক সিনেমার জন্য গোল্ডেন গ্লোব, ক্রিটিকস চয়েজ অ্যাওয়ার্ডস, স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ডস পুরস্কার পান। সেরা অভিনেত্রী হিসেবে পান অস্কার মনোনয়ন। চলতি বছরের শুরুতে তিনি গোল্ডেন গ্লোবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান সেটি অন্য অনেকের মতো ডেমির কাছেও এসেছিল বড় বিস্ময় হয়। পুরস্কার গ্রহণ করে অভিনেত্রী বলেছিলেন, আমি আশাই করিনি এটি বড় একটা ধাক্কা। ৪৫ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছি, সেভাবে পুরস্কার পাইনি। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। শুনতে বিস্ময়কর হলেও এটিই ছিল তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রথম পুরস্কার। অনেকে ভেবেছিলেন তিনি হয়তো অস্কারও জিতবেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘আনোরা’র জন্য পুরস্কারটি গেছে মাইকি ম্যাডিসনের হাতে। এ নিয়ে হতাশা থাকলেও আক্ষেপ নেই অভিনেত্রীর। কিছুদিন আগেই টাইম সাময়িকীর ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন ডেমি। পরে টাইম সামিটে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, শ্রেয়তর হিসেবেই অস্কার পেয়েছেন মাইকি। কী আছে ‘সাবস্ট্যান্স’-এ: গত বছর প্রায় সব সমালোচকই বছরের সেরা সিনেমার যে তালিকা করেছেন সেখানে রয়েছে ‘দ্য সাবট্যান্স’-এর নাম। কী আছে সাড়া জাগানো এই সিনেমায়? বিনোদন দুনিয়ার খোঁজখবর রাখলে গল্পটি আপনার চেনা মনে হতে পারে। প্রখ্যাত তারকা এলিজাবেথ স্পার্কলসের গল্প। টিভির এই ফিটনেস শো তারকার ক্যারিয়ার পড়তির দিকে। নিজের ৫০তম জন্মদিনের দিনই সে জানতে পারে যে তার বিকল্প খোঁজা হচ্ছে। মরিয়া হয়ে ব্ল্যাক মার্কেট ড্রাগ নিতে চায় সে। কিন্তু ঘটনা ঠিক তার মতো হয় না। এলিজাবেথ চেয়েছিল, ব্ল্যাক মার্কেট ড্রাগ নিয়ে উন্নততর সংস্করণে হাজির হতে। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত দুঃস্বপ্ন হয়ে ফিরে আসে। গত বছর কান উৎসবে প্রদর্শিত হওয়ার পর থেকেই কোরেলি ফারজার এই বডি হরর সিনেমার উচ্চকণ্ঠ প্রশংসা করেছেন সমালোচকেরা। নিরীক্ষাধর্মী নির্মাণ, দুর্দান্ত সম্পাদনার সঙ্গে ডেমি মুর, মার্গারেট কোয়ালি, ডেনিস কোয়েদের অভিনয়ের কারণে সমালোচকেরা তারিফ করেছন ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’-এর। অন্যান্য বডি হরর সিনেমার মতো এতেও প্রস্থেটিক মেকআপের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এ ছবিতে প্রস্থেটিকসের কাজ দেখলে চমকে যাবেন। অতীতের সব কাজ মনে রেখেও এটিকে ডেমি মুরের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সিনেমা বললেও ভুল হবে না। সেরা সুন্দরী: পিপল সাময়িকীর বিচারে চলতি বছর সবচেয়ে সুন্দর নারীর তকমা পেয়েছেন ডেমি। আগামী মাসের সাময়িকীর প্রচ্ছদও তিনি। এ উপলক্ষে পিপল-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সৌন্দর্যসহ নানা বিষয়ে সবিস্তার কথা বলেছেন অভিনেত্রী। ‘আপনি একটি ফুলের দিকে তাকিয়ে তার সৌন্দর্য দেখতে পারেন, সৌন্দর্যকে চাইলে এভাবে দেখা যায়। মানুষের ক্ষেত্রে বললে ইতিবাচকতা আর মৌলিকত্বের মধ্যে সৌন্দর্য খুঁজে পাই,’ বলেন ডেমি। ডেমির বয়স এখন ৬২। দ্য সাবস্ট্যান্স দিয়ে তার ক্যারিয়ারের পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। তবে সেটি কি এই এক সিনেমাতেই থেমে থাকবে নাকি সামনে আরো চমক নিয়ে হাজির হবেন অভিনেত্রী; সেটি সময় বলে দেবে। আমারবাঙলা/এমআরইউ

‘নগ্নকন্যা’ থেকে বিশ্বের সেরা সুন্দরী
Tags
# Amarbangla Feed
# IFTTT
Share This
.png)
About News Desk
আসসালামু আলাইকুম।আমরা আপনাদের মাঝে নিয়ে এসেছি সকল চাকরি, সরকারি নোটিশ, লেখাপড়ার খবর, প্রশ্নপত্র এবং অন্যান্য খবর সবার আগে পেতে আমাদের আমাদের সাথে থাকুন।
ধন্যবাদ।
Newer Article
দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
Older Article
ইরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ১৪, আহত ৭৫০
নীলফামারীতে “নৃত্য উৎসব” অনুষ্ঠিত
News DeskMay 13, 2025সাজাভোগ শেষে ভারতীয় নাগরিককে হস্তান্তর
News DeskMay 13, 2025ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা
News DeskMay 12, 2025
Tags:
Amarbangla Feed,
IFTTT
Subscribe to:
Post Comments (Atom)