জুলাই সনদের বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না - সবার জন্য শিক্ষা, লেখাপড়া বিষয়ক বাংলাদেশের প্রথম ব্লগ সাইট।

সাম্প্রতিক

জুলাই সনদের বৈধতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না

false
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দুই দফা সংলাপের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা, জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বিত খসড়াটি আগামী বুধবার (১৩ আগস্ট) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাবে। খসড়ায় ৯ দফা অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার উদ্দেশ্য হলো সনদের বৈধতা নিয়ে যেন আদালতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে। এতে বলা হয়েছে, যেসব সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি, বাস্তবায়নের পুরো প্রক্রিয়ায় আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। যদি সনদের কোনো অংশ সংবিধান বা প্রচলিত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, সে ক্ষেত্রে সনদকেই অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টিও এতে উল্লেখ রয়েছে। ৬টি সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ গত ৩১ জুলাই শেষ হয়েছে। সংলাপ শেষে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, দ্রুত জুলাই সনদের চূড়ান্ত সমন্বিত খসড়া তৈরি করে দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। এরপর মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা চূড়ান্ত জুলাই সনদে দলগুলোর স্বাক্ষর নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কমিশন জাতীয় সনদের সমন্বিত খসড়া প্রস্তুত করেছে। বুধবারের(১৩ আগস্ট) মধ্যে তা দলগুলোর কাছে পাঠানোর কথা রয়েছে। জানতে চাইলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘সমন্বিত খসড়া এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। আমরা খসড়ার ভাষা ও শব্দগত দিকটি দেখে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে বুধবারের মধ্যেই পাঠাতে পারব বলে আশা করি এবং এর ভিত্তিতে আমরা দ্রুত জুলাই সনদ তৈরি করব।’ ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে হওয়া দুই ধাপের সংলাপের ১৬৬টি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম ধাপে ৬২টি প্রস্তাবে দলগুলো ঐকমত্য হয়। দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে ২০ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয় কমিশন, যার মধ্যে ৯টিতে নোট অব ডিসেন্ট আছে। দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ চলাকালে গত ২৮ জুলাই দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের প্রাথমিক খসড়া দেওয়া হয়। সেখানে ৭ দফা অঙ্গীকারনামা ছিল। অঙ্গীকারের একটি ছিল দুই বছরের মধ্যে সনদ বাস্তবায়ন করা হবে। বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল তাতে সমর্থন করে। তবে জুলাই সনদ বর্তমান সরকারের সময়েই বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ অধিকাংশ দল। তারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া না হলে তাতে স্বাক্ষর না করার হুমকিও দেয়। তখন কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরিতে আবার আলোচনার কথা জানানো হয়। সমন্বিত খসড়ায় জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ৯ দফার অঙ্গীকারনামা থাকছে। যার ভিত্তিতে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে রাজনৈতিক দল ও জোট। অঙ্গীকারনামায় জুলাই সনদের ব্যাখ্যা, প্রয়োগ ও বৈধতা-সংক্রান্ত বিষয়গুলোর এখতিয়ার আপিল বিভাগের ওপর ন্যস্ত করা, সনদকে সম্পূর্ণ আইনগতভাবে কার্যকর হিসেবে গণ্য করা এবং এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা কিংবা জারির কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে আদালতেও প্রশ্ন তোলা যাবে না মর্মে উল্লেখ রয়েছে বলে জানা গেছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষার পূর্ণ নিশ্চয়তা বিধানের পাশাপাশি সনদের কোনো শব্দ, বাক্য ও নীতিমালা সংবিধান বা অন্য কোনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে সনদকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা থাকছে অঙ্গীকারনামায়। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে সমন্বিত খসড়ায় অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে বিবেচিত সুপারিশগুলো কালক্ষেপণ না করে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর জাতীয় নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়নের যথাযথ ও কার্যকর পদক্ষেপের কথা আছে। গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে হাজারো মানুষের জীবনদান, অগণিত মানুষের সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে জন-আকাঙ্ক্ষার জুলাই জাতীয় সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার কথা থাকছে অঙ্গীকারনামায়। জনগণের সর্বজনীন অভিপ্রায়ে তৈরি করা সনদের সব বিধান, নীতি ও সিদ্ধান্ত সংবিধানের ৯৩(২) অনুচ্ছেদ বা অন্য কোনো আইন বা রায় থাকা সত্ত্বেও কার্যকর ও প্রাধান্য লাভ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সম্বলিত অধ্যাদেশ জারি করার ওয়াদা রয়েছে এতে। সনদে দেশের শাসন ব্যবস্থা তথা সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশি ব্যবস্থা ও দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার প্রস্তাব বা সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন, লিখন ও পুনর্লিখন এবং বিদ্যমান আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন, লিখন, পুনর্লিখন বা নতুন আইন প্রণয়ন, প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন বা বিদ্যমান বিধি ও প্রবিধির পরিবর্তন বা সংশোধনের কথা খসড়ায় রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে, জুলাই সনদের আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিতে গত রবিবার ৬ জন বিশেষায়িত বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বিশেষজ্ঞদের লিখিতভাবে পরামর্শ দিতে অনুরোধ করা হয়, যা আগামীকাল বৃহস্পতিবারের মধ্যে পাওয়ার আশা করছে কমিশন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ওই দিনই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় কমিশন। এরপর জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করতে কমিশন আগামী সপ্তাহে দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় ধাপের সংলাপে বসবে বলে জানা গেছে। আমারবাঙলা/এফএইচ

No comments:

Post a Comment